ঢাকা, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঠ্যবইয়ে ডারউইনের তত্ত্ব: আমরা সবাই বানর ছিলাম!

প্রকাশিত: বুধবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ ৫:১২ অপরাহ্ণ  

| Hanif Khan

শাহেদ মতিউর রহমান

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক থাকলেও এখন অভিভাবকদের মধ্যেও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে কপি পেস্ট করে যুক্ত করা হয়েছে কয়েকটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও ষষ্ঠ শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে স্থান পেয়েছে ডারউইনের তত্ত্ব। সেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে বানর থেকে কিভাবে হয়েছে মানুষের জন্ম। ছবিতে বানরের আকৃতি দিতে বলা হয়েছে পূর্বজন্মে আমরা (মানুষ) সবাই বানর ছিলাম। সেখান থেকেই কালের বিবর্তনে আমরা মানুষে রূপান্তরিত হয়েছি। এ ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসেও ভুল তথ্য উপাত্ত দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল শেখানো হচ্ছে।

এ দিকে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশ ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি পেস্ট করে তুলে দেয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ভুল করার দায় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান। বইয়ের একটি অধ্যায়ের বিতর্কিত ওই অংশটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ডারউইনের তত্ত্ব শেখানো নিয়ে। ইসলামবিরোধী এই তত্ত্ব কৌশলে স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছে দিতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর প্রথম ধাপেই ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে বানর ছিল আর সেখান থেকেই কালের বিবর্তনে ধাপে ধাপে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে।
বইয়ের ১১৪ নং পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ ঠিক তার পরের পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনাম দিয়ে চারটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে মূলত বানর ছিল । আর তার পরেই কয়েকটি ধাপে বানর থেকেই মানুষের আকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে। অপর দিকে নতুন শিক্ষাবর্ষের নবম-দশম শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়।’ এখানেও শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য শেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দফতর।

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ডারউইনের তত্ত্ব শেখানো নিয়ে। ইসলামবিরোধী এই তত্ত্ব কৌশলে স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছে দিতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর প্রথম ধাপেই ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে বানর ছিল আর সেখান থেকেই কালের বিবর্তনে ধাপে ধাপে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে।
বইয়ের ১১৪ নং পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ ঠিক তার পরের পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনাম দিয়ে চারটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে মূলত বানর ছিল । আর তার পরেই কয়েকটি ধাপে বানর থেকেই মানুষের আকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে। অপর দিকে নতুন শিক্ষাবর্ষের নবম-দশম শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়।’ এখানেও শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য শেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দফতর।

পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য ও ভুল ইতিহাস লেখার বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. কায়কোবাদ জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আমরা ভুল শিখাবো এটা ভাবতেই পারি না। এই ভুল তথ্যের জন্য পাণ্ডুলিপি লেখকদের কেউই দায় এড়াতে পারবেন না। আর এতে প্রমাণ হয় আমরা যোগ্য লোককে সঠিক দায়িত্ব দিতে পারছি না। যার কারণেই শিক্ষা সেক্টরের আজ এই অবস্থা। আগামীতে যোগ্য লোকদের দিয়ে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখার দায়িত্ব দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে যে অধ্যায় লেখা হয়েছে সেখানে দেখানো হয়েছে বানর থেকেই মানুষের জন্ম। এই তত্ত্বের কোনো ইসলামিক ব্যাখ্যা বা সত্যতা নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলেন, ইসলাম প্রধান দেশে এমন একটি বিতর্কিত বিষয়ে পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা দাবি করেন আগামী শিক্ষাবর্ষ নয় বরং চলতি বছরেই অবিলম্বে এই বিতর্কিত বিষয় পাঠ্য বই থেকে বাতিল করতে হবে।


অন্য দিকে সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটিতে একটি অধ্যায়ে গুগল থেকে কপি পেস্ট করে দেয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বইটি রচনার সাথে যুক্ত ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খান। বইয়ের রচনায় আরো যুক্ত ছিলেন ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব, রনি বসাক। আর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটির ব্যাপারে একটি অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বইয়ের কোনো কোনো অধ্যায়ের অংশবিশেষ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের এই নির্দিষ্ট অংশটুকু এবং ওয়েবসাইটটির একই লেখাটুকু তুলনা করে অভিযোগটি আমাদের কাছে সত্য বলেই প্রতীয়মাণ হয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলেন, ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দু’জন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।

জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণীর ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের (তৃতীয় পৃষ্ঠা) শুরুতে তুলে ধরা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য কী। পাঠ্য পুস্তকটিতে লেখা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য বা ইরড়ফরাবৎংরঃু শব্দ দ্বারা পৃথিবীতে জীবনের বিপুল বৈচিত্র্য বর্ণনা করা হয়। জীববৈচিত্র্য বলতে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ সব জীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্যকে বোঝায়। পৃথিবীতে ঠিক কত সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন জীব আছে, তা নিশ্চিত করে এখনো আমাদের জানা নেই। তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে, প্রায় ৮-১৪ মিলিয়ন (৮০ থেকে ১৪০ লাখ) বিভিন্ন প্রজাতির জীব এই পৃথিবীতে রয়েছে। কারো কারো ধারণা মতে, সংখ্যাটা আরো বেশি। তবে সংখ্যা যাই হোক না কেন, এসব জীবের বেশির ভাগই আমাদের অজানা। এখন পর্যন্ত মাত্র ১ দশমিক ২ মিলিয়ন (১২ লাখ) প্রজাতি শনাক্ত এবং বর্ণনা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পোকামাকড়। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, কোটি কোটি অন্যান্য জীব এখনো আমাদের কাছে রহস্যময়, অজানা।


পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য বা বিকর্তিত তথ্য সন্নিবেশ করার বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, যেহেতু এ বছর থেকে কয়েকটি শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যসূচি দিয়ে বই ছাপানো হয়েছে কাজেই কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। তবে যেসব অভিযোগ আমরা পাচ্ছি সেগুলো অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা এনসিটিবির পক্ষ থেকে একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছি। এই কমিটি বিষয়গুলো দেখবে। এরপর যেসব বিষয়ে ভুল আছে বলে সুপারিশ করা হবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন বইয়ে সেগুলোর সংশোধন করা হবে। এ ছাড়া মেজর কোনো ভুল ধরা পড়লে আমরা এনসিটিবি থেকেই একটি সংশোধনী তৈরি করে তা স্কুলে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।

নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ের নানা ভুল ও অসঙ্গতি নিয়ে ঢাকায় বই বিতরণের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেছিলেন, নতুন বইয়ে কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। তবে যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমের এই বইগুলো এখনো চূড়ান্ত পাঠ্যসূচি হিসেবে ঠিক করা হয়নি তাই এগুলো পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। আর পাঠ্যবইয়ের প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখা রয়েছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। কাজেই আমাদের সুযোগ আছে ভুল বা অসঙ্গতিগুলো বাতিল করে নতুনভাবে আগামী বছরে আবারো সংশোধন করে নতুন বই ছাপানোর।

বিনোদন, লাইফস্টাইল, তথ্যপ্রযুক্তি, ভ্রমণ, তারুণ্য, ক্যাম্পাস ও মতামত কলামে লিখতে পারেন আপনিও – example@gmail.com ইমেইল করুন  

সর্বশেষ

জনপ্রিয় সংবাদ