| Hanif Khan
সাত সাগরের মাঝি
– ফররুখ আহমদ
কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হল জানি না তা ।নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা ।দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা।তবু জাগলে না ? তবু, তুমি জাগলে না ?সাত সাগরের মাঝি চেয়ে দেখো দুয়ারে ডাকো জাহাজ,অচল ছবি সে, তসবির যেন দাঁড়ায়ে রয়েছে আজ ।হালে পানি নাই, পাল তার ওড়ে নাকো,হে নাবিক! তুমি মিনতি আমার রাখো;তুমি ওঠে এসো, তুমি ওঠে এসো মাঝি মাল্লার দলেদেখবে তোমার কিশতি আবার ভেসেছে সাগর জলে,নীল দরিয়ায় যেন সে পূর্ণ চাঁদমেঘ তরঙ্গ কেটে কেটে চলে ভেঙে চলে সব বাঁধ ।তবু তুমি জাগো, কখন সকাল ঝরেছে হাসনাহেনাএখনো তোমার ঘুম ভাঙলো না ? তবু, তুমি জাগলে না ?দুয়ারে সাপের গর্জন শোনো নাকি ?কত অসংখ্য ক্ষুদধিতের সেথা ভির,হে মাঝি ! তোমার বেসাতি ছড়াও, শোনো,নইলে যে-সব ভেঙে হবে চৌচির ।
তুমি দেখছ না, এরা চলে কোন আলেয়ার পিছে পিছে ?চলে ক্রমাগত পথ ছেড়ে আরও নিচে !হে মাঝি ! তোমার সেতারা নেভেনি একথা জানো তো তুমি,তোমার চাঁদনি রাতের স্বপ্ন দেখেছে এ মরুভূমি,দেখো জমা হল লালা রায়হান তোমার দিগন্তরে;তবু কেন তুমি ভয় পাও, কেন কাঁপো অজ্ঞাত ডরে !তোমার জাহাজ হয়েছে কি বানচাল,মেঘ কি তোমার সেতারা করে আড়াল ?তাই কি অচল জাহাজ ভাঙা হালতাই কি কাঁপছে সমুদ্র ক্ষুধাতুরবাতাস কাঁপানো তোমার ও ফাঁকা পাল ?জানি না, তবু ডাকছি তোমাকে সাত দরিয়ার মাঝি,প্রবাল দ্বীপের নারিকেল শাখা বাতাসে উঠেছে বাজি ?
এ ঘুমে তোমার মাঝিমাল্লার ধৈর্য নেইকো আর,সাত সমুদ্র নীল আকাশে তোলে বিষ ফেনভার,এদিকে অচেনা যাত্রী চলেছে আকাশের পথ ধরেনারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা ।বেসাতি তোমার পূর্ণ করে কে মারজানে মর্মরে ?ঘুমঘোরে তুমি শুনছ কেবল দুঃস্বপ্নের গাঁথা ।
উচ্ছৃঙ্খল রাত্রির আজো মেটেনি কি সব দেনা ?সকাল হয়েছে । তবু জাগলে না ? তবু তুমি জাগলে না ?তুমি কি ভুলেছ লবঙ্গ ফুল, এলাচের মৌসুমী,যেখানে ধূলিতে কাঁকরে দিনের জাফরান খোলে কলি,যেখানে মুগ্ধ ইয়াসমিনের শুভ্র ললাট চুমিপরীর দেশের স্বপ্ন সেহেলি জাগে গুলে বকাওলি ?ভুলেছ কি সেই প্রথম সফর জাহাজ চলেছে ভেসেঅজানা ফুলের দেশে,ভুলেছ কি সেই জমরুদ তোলা স্বপ্ন সবার চোখেঝলসে চন্দ্রলোকে,পাল তুলে কোথা জাহাজ চলেছে কেটে কেটে নোনা পানি,অশ্রান্ত সন্ধানী ।
পাঞ্জেরি
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষেকোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’বতোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’বঅস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।আহা, পেরেশান মুসাফির দল।দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরেনিরাশায় ছবি এঁকে!পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরেচলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;একাকী রাতের ম্লান জুলমাত হেরি!রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে,আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসিদেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি।কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কিরোনাজারি ক্ষুধিতের!ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।পাঞ্জেরি!জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি,জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি!দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!
Peoples News
© 2020 - kishorvabona.com প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | Design kishorvabona